বি.এম. জুলফিকার রায়হান: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশের দক্ষিন-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ নানান ভোগান্তির শিকার। কৃষি, খাদ্য, আবাসস্থল, সু-পেয় পানি সহ নানান সংকটের কারনে এ-উপকূলের মানুষের বসবাস দিনে দিনে অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। যে কারনে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে এখানকার মানুষ প্রতিনিয়ত ঘর-বাড়ি ফেলে অন্যত্র বিশেষ করে শহর অঞ্চলে স্থানান্তর হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে শহর-ও একসময়ে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হবে এবং চারিেিদক মানবিক সংকট তৈরি হবে। সংকট মোকাবেলা এবং উপকূলীয় জনপদে মানুষের বসবাস নিশ্চিত করতে হলে বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা দরকার। অথচ তা না রেখে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে পরিবেশ ও জলবায়ু সংক্রান্ত খাতে ৩৬ হাজার ৬২২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা জাতীয় বাজেটের ৭.১% এবং জিডিপির ০.৭৪%। যদিও পূর্বের তুলনায় এটিকে কিছুটা অগ্রগতি হিসেবে দেখা যায়। তবে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী এটি অনেক কম, যেখানে প্রয়োজনীয়তা ধরা হয় বাজেটের ১৫-২০%। বিশ্বব্যাংক’র মতে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাজেটের ১৫-২০% জলবায়ু অভিযোজন খাতে ব্যয় করা উচিত, অথচ বাংলাদেশের বরাদ্দ মাত্র ৭.১%। এছাড়াও ২০২৪ সালের সিপিআই রিপোর্ট অনুযায়ী, বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়নের মাত্র ৩% খরচ হয় জেন্ডার সংবেদনশীল প্রকল্পে।
শনিবার (২৮ জুন) সকালে খুলনার একটি হোটেলে অ্যাওসেড এবং কেয়ার বাংলাদেশ-এর আয়োজনে, জলবায়ু এবং দূর্যোগ ঝুঁকি অর্থায়ন ও বীমা সম্পর্কীত বিভাগীয় পর্যায়ে মাল্টি অ্যাক্টর প্লাটফর্ম (ম্যাপ) সদস্যদের নিয়ে কনসালটেশন সভায় এসব তথ্য উঠে আসে।
সভায়- কনসালটেশন শেয়ারিং সভার উদ্দেশ্য উপস্থাপন করেন অ্যাওসেড’র নির্বাহী পরিচালক হেলেনা খাতুন। সভা সঞ্চালনা করেন বিভাগীয় ম্যাপ কমিটির সদস্য সচিব, কৃষিবীদ এস.এম. ফেরদৌস। মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় (কুয়েট) এর ইউআরপি বিভাগের অধ্যাপক ড. তুষার কান্তি রায় এবং অ্যাওসেড’র লার্নিং ও অ্যাডভোকেসি অফিসার এস.কে.এম.ডি. বাহলুল আলম।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মীর রিফাত জাহান উষা, অধ্যক্ষ রাজিব বাছাড়, স্বদেশ এর নির্বাহী পরিচালক মাধব দত্ত, অধ্যাপক নার্গিস আক্তার লুনা, বাগেরহাটের হেলাল উদ্দিন কলেজের সহকারী অধ্যাপক উত্তম কুমার দাশ, খুলনা ইসলামিয়া কলেজের অধ্যাপক ইফাত সানিয়া ন্যান্সি, সহকারী অধ্যাপক ইমরান হোসেন, মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের খুলনা প্রতিনিধি মোস্তফা জামাল পপলু, কালের কণ্ঠের ষ্টাফ রিপোর্টার কৌশিক দে বাপি, ঢাকা ট্রিবিউনের বিভাগীয় প্রতিনিধি হেদায়েত হোসেন, যমুনা টেলিভিশনের খুলনা ব্যুরো আবুল এহসান, দেশ টিভির সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি ও জেলা ম্যাপ’র সেক্রেটারী শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন, দৈনিক সংবাদ ও প্রবাহ পত্রিকার তালা প্রতিনিধি এবং ম্যাপের তালা উপজেলা সদস্য সচিব জুলফিকার রায়হান, ম্যাপ সদস্য ফারহানা কবীর, বাগেরহাট ম্যাপ’র সভাপতি সৈয়দ শওকত হোসেন, ধ্রুব সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রেখা মারিয়া বৈরাগী, রূপান্তরের এস.এ হালিম, ছিন্নমূল মানব কল্যাণ সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক আবুল হোসেন, সাতরং মহিলা কল্যাণ সংস্থার সভাপতি শিরিনা বেগম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
আলোচনাকালে বক্তারা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন। যেমন- উপকূলীয় অঞ্চলের ঝুঁকি ও চাহিদাভিত্তিক তথ্যের অভাব, জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া বাজেট গৃহীত হওয়া, নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য কোনো পৃথক সহায়তা প্যাকেজ না থাকা এবং জলবায়ু ও দূর্যোগ ঝুঁকি অর্থায়ন ও বীমা (সিডিআরএফআই) কাঠামো বাজেটে অন্তর্ভুক্ত না হওয়া।
বিষয়গুলো সমাধানের লক্ষ্যে উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য ৫০০ কোটি টাকার একটি পৃথক তহবিল গঠন, সিডিআরএফআই কাঠামোকে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত ও কার্যকর করা, নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য জরুরি সহায়তা প্যাকেজ প্রদান, আগাম সহায়তা ব্যবস্থা চালু, তথ্যভিত্তিক ব্যবস্থাপনা ও মাইক্রো ইন্সিউরেন্স চালু, কমিউনিটি-ভিত্তিক অভিযোজন (সিবিএ) ও পরিবেশ ভিত্তিক সমাধানের গুরুত্বারোপ, উপজেলা পর্যায়ে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বাজেট পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল অঞ্চলের জন্য জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ প্রদান, উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য বিশেষ মন্ত্রনালয় বা বোর্ড গঠনের দাবী সহ গুরুত্বপূর্ণ একাধিক সুপারিশ উঠে আসে।