সাতক্ষীরা দুপুর ১:২২ সোমবার , ৫ মে ২০২৫
  • ৯ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ২৭শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি
    1. অর্থনীতি
    2. আইসিটি
    3. আন্তর্জাতিক
    4. আশাশুনি
    5. উপকূল
    6. কলাম
    7. কলারোয়া
    8. কালিগঞ্জ
    9. কৃষি
    10. খুলনা
    11. খেলার খবর
    12. জাতীয়
    13. জেলার খবর
    14. জ্বালানি
    15. তালা
    https://shoyaibenterprise.com/
    আজকের সর্বশেষ সবখবর

    মোবাইল: লেখক- প্রিন্সেস আশা

    mir khairul alam
    মে ৫, ২০২৫ ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ
    Link Copied!

     

    যন্ত্রটা হাতে না থাকলে মানুষ এখন আধা-অসুস্থ, আধা-অচল। যন্ত্রটা হাতে না থাকলে যেন মানুষের ভারসাম্য নড়ে যায়। আধুনিক সমাজে মোবাইল ফোন এমন এক অনিবার্য সঙ্গী, যাকে ছাড়া দিন শুরু হয় না, দিন শেষ হয় না। সকালের ঘুমভাঙা থেকে রাতের চোখবোজা পর্যন্ত, সে আমাদের সঙ্গে সঙ্গে চলে। চশমার মতো মোবাইল ফোনও আজ শরীরের অঙ্গ। মোবাইল—এই ক্ষুদে যন্ত্রটি আজকাল এমন এক জাদুকর, যার তাবিজে গোটা পৃথিবীটাকেই আমরা মুঠোয় ধরে রাখি।

    আগেকার দিনে বার্তা পাঠাতে ডাকপিয়নের মুখের দিকে চেয়ে থাকতে হতো। ‘আসছে না কেন?’ এই প্রশ্নে দরজার দিকে তাকিয়ে পথ চেয়ে থাকার অনুভূতিটাই ছিলো প্রিয়জনকে ভালোবাসার আলামত। এখন? আঙুলের এক চাপেই ‘হ্যালো’ থেকে শুরু করে চোখের জল—সবই পৌঁছে যায় সেকেন্ডের ব্যবধানে। মোবাইল যেন এক সময়-জয়ী বার্তাবাহক। শব্দের গায়ে লেগে যায় মুখের হাসি, কণ্ঠের কম্পন। শুধু শোনা নয়, দেখা, বোঝা, অনুভব—সবই সম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    মোবাইল ফোন কেবল যোগাযোগের মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ নয়। এ যেন এক আধুনিক আলাদিনের চেরাগ—তাতে হালকা ঘষা দিলেই বেরিয়ে আসে খবর, মানচিত্র, গান, সিনেমা, বাজার-সদাই, ডাক্তার, শিক্ষক—আরও কত কিছু! গৃহিণী এখন বাজারের দরদাম জানেন মোবাইল ঘেঁটেই; ছাত্র জানে শ্রেণির বাইরের অনেক শিক্ষার খবর; এমনকি দূর-দূরান্তের কৃষকরাও আবহাওয়ার খবর রাখেন এই মোবাইলেই। একসময় যা ছিল কল্পনা, মোবাইল সেটাকেই বাস্তবে নামিয়ে এনেছে।

    কিন্তু এই বাহাদুরি যতই হোক, সব ভালো জিনিসেরই একটা প্রতিকূল দিক থাকে—মোবাইল তার ব্যতিক্রম নয়। আজকের শিশুরা খেলতে মাঠে যায় না, তারা হাঁ করে তাকিয়ে থাকে মোবাইলের স্ক্রিনে। যে বয়সে গাছ চেনা উচিত, পাখির ডাক শোনা উচিত, সে বয়সে তারা গেমসের দুনিয়ায় বন্দি। মোবাইলের নীল আলো শিশুর চোখ থেকে ঘুম কেড়ে নেয়, মন থেকে কল্পনা সরিয়ে দেয়। আবার বড়দের দিকেও তাকালে দেখা যায়, পরিবারে একসঙ্গে বসে থেকেও সবাই আলাদা—প্রতিটি মানুষ যেন নিজস্ব মোবাইল দ্বীপে বাস করছে।

    মোবাইল—এ আমাদের মানসিকতা, আমাদের চাওয়া-পাওয়ার ধরন, এমনকি আমাদের চিন্তার গঠনকেও বদলে দিয়েছে। আগেকার দিনে সন্ধ্যা মানে ছিল রেডিওর গান, পরিবারের গল্প, জানালার বাইরের জোৎস্না দেখা। এখন সন্ধ্যা মানেই চার্জার খোঁজা, ডেটা অন করা, আর ঘরের চার কোণে অদৃশ্য পর্দার মতো নীরবতা। লোকজন আছে, হাসি নেই; মুখ আছে, মুখোমুখি নেই।

    এই মোবাইল ফোন সমাজকে একদিকে দ্রুত করলেও অন্যদিকে তাকে গভীরভাবে ধীর করে দিয়েছে। মানুষ খবর জানছে দ্রুত, কিনছে দ্রুত, ভাবছে দ্রুত, খাচ্ছে পর্যন্ত দ্রুত—কিন্তু ভালোবাসছে না। কারো উত্তর না পেলে মন খারাপ, উত্তর এলেও যদি তা হৃদয় ছুঁয়ে না যায়, তবুও মন খারাপ। একটুকরো বার্তার প্রত্যাশায় দিন কাটে, আর প্রতিউত্তরের নির্লিপ্ততায় রাত জেগে থাকে। সম্পর্কগুলো যেন এখন ‘সিন’ আর ‘রিপ্লাই’-এর দোলাচলে দুলছে।

    এই ‘আধুনিক নিঃসঙ্গতা’ ভয়াবহ। মোবাইল মানুষকে একদিকে বিশ্বজনীন করলেও অন্যদিকে ব্যক্তিগত করে ফেলেছে। বন্ধু আছে, কিন্তু ডাকে না; পরিবার আছে, তবু পাশে বসে মন নেই; স্বামী-স্ত্রী একই ঘরে, কিন্তু একে অন্যের চোখে না তাকিয়ে শুধু স্ক্রিনে তাকিয়ে দিন পার। এই কি সভ্যতা?

    অথচ এই মোবাইলই অনেক সময় আমাদের একা থাকাকে সহজ করেছে। ধরুন কেউ পরিবার থেকে অনেক দূরে কোনো পাহাড়ি গ্রামে থাকে—সেই মানুষটিও আজ তার প্রিয়জনের সঙ্গে মুখোমুখি দেখা করতে না পারলেও হৃদয়ের সংলাপ চালাতে পারে। এই একটাই যন্ত্র তাকে পৃথিবীর সঙ্গে যুক্ত করে রাখে। রোগী হাসপাতালে শয্যাশায়ী—তবু দূরের মেয়ের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলতে পারে। এক মায়ের কাছে এ যন্ত্র তাই স্বর্গের সমান।

     

    আরো গভীরভাবে ভাবলে দেখা যায়, মোবাইল আমাদের স্বভাবকে একপ্রকার আয়নায় ধরেছে। আমরা যেরকম, মোবাইল আমাদের তেমন করে তোলে না; বরং আমরা যেরকম হইতে চাই, মোবাইল সে পথ দেখায়। কেউ যদি জ্ঞান অন্বেষণ করতে চায়—সে মোবাইলের মধ্যেই বিশ্বজ্ঞান খুঁজে পায়; কেউ যদি প্রেমিক হয়—সে মোবাইলের মধ্যেই কবিতা খোঁজে; কেউ যদি অলস হয়—সে মোবাইলেই অলসতা চর্চা করে। মোবাইল ভালো না মন্দ নয়—ব্যবহারকারীর চরিত্রই মোবাইলের আসল পরিচয়।

    তবে একটা প্রশ্ন থেকে যায়—এই মোবাইল কি আমাদের স্মৃতি ক্ষমতা হ্রাস করছে না? আগেকার দিনে ফোন নম্বর মুখস্থ রাখা ছিল একরকম কৃতিত্ব; এখন তো নিজের জন্মদিন বা জাতীয় সংগীতের চার লাইনও অনেকে গুগল ছাড়া মনে রাখতে পারে না। মোবাইল আমাদের শরীরকে করিয়েছে নিশ্চল, চোখকে করেছে স্থির, মনকে করেছে চঞ্চল।
    তবে, মোবাইলকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। দোষ আমাদের নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহারের অভ্যাসে। মোবাইলকে আমরা যদি নিছক যন্ত্র হিসেবে দেখি, যদি তার ব্যবহারে শৃঙ্খলা ও সংযম রাখি—তবে এই ছোট্ট বস্তুটাই হতে পারে আমাদের জ্ঞানের দীপ, সম্পর্কের সেতু, সাহায্যের হাত।
    আমরা যেন মোবাইলের হাত ধরে প্রযুক্তির পথে হাঁটি ঠিকই, তবে মানবতার পথটা ভুলি না। মোবাইল হোক আলোর বাহক, অন্ধকারের কারাগার নয়।

    শেষ কথা: মোবাইল ফোন আধুনিক সভ্যতার এক বিস্ময়কর উপহার। একে দূরত্ব ঘোচাতে ব্যবহার করি, অন্তরায় তৈরি করতে নয়। যেন এ যন্ত্র মানুষের অধীনেই থাকে, মানুষ যন্ত্রের অধীনে নয়—এই হোক আমাদের প্রযুক্তিবোধের নতুন দিগন্ত।

    এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।