নিজস্ব প্রতিনিধি:
হাসপাতালের বিছানায় চোখে সাদা ব্যান্ডেজ আর হাতে স্যালাইনের ক্যানুলা নিয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে ৮ বছর বয়সী শিশু ইমদাদুল হক। তার চোখের দৃষ্টি আর রঙিন ভবিষ্যৎ, দুটোই আজ এক আকস্মিক দুর্ঘটনায় ঘোর অন্ধকারে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী গ্রামের হতদরিদ্র দিনমজুর মোঃ রফিকুল ইসলামের এই ছেলে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে একটি মোরগের আক্রমণে বাম চোখে মারাত্মক আঘাত পেয়েছে। ঢাকার ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা তার চোখে জরুরি অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিয়েছেন, কিন্তু অর্থাভাবে তার চিকিৎসা আটকে আছে।
গত জুন মাসে (সঠিক তারিখ বলতে পারেনি) দুপুরে স্কুল ছুটির পর বন্ধুদের সাথে বাড়ি ফিরছিল ইমদাদুল। পথের মধ্যেই হঠাৎ একটি মোরগ তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ঠোঁট বা নখ দিয়ে তার বাম চোখে তীব্রভাবে আঘাত করে। তার আর্তচিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে শ্যামনগর উপজেলা সাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করে।
পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের সদস্যরা তাকে দ্রুত খুলনা শিরোমণি হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু আঘাত গুরুতর হওয়ায় এবং চোখের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে ঢাকার উন্নত চিকিৎসার জন্য ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রেফার করেন।
ঢাকার ইস্পাহানী হাসপাতালের একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় শিশুটির চোখের ভয়াবহ অবস্থা ধরা পড়েছে। গত ২৪শে জুলাই করা বি-স্ক্যান (B-Scan) রিপোর্টে চোখের ভেতরে ঘন রক্তজমাট বা ‘ডেন্স ভিট্রিয়াস ওপাসিটি’ (Dense Vitreous Opacity) এবং চোখের পেছনের স্তরে ফোলাভাব সনাক্ত করা হয়েছে। হাসপাতালের প্রোগ্রেস শিট অনুযায়ী, কনসালটেন্ট ডা. মালিহা রহমান শিশুটিকে পর্যবেক্ষণের পর দ্রুত অস্ত্রোপচারের (অপারেশন) পরামর্শ দিয়েছেন, যা জেনারেল অ্যানেসথেসিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।
ইমদাদুলের বাবা, মোঃ রফিকুল ইসলাম, কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমি পরের জমিতে কাজ করে দিন আনি দিন খাই। আমার সব স্বপ্ন আমার ছেলেকে ঘিরে। ঢাকার ডাক্তাররা বলেছেন, দ্রুত কয়েকটি অপারেশন না করালে চোখটা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে। এর জন্য অনেক টাকা দরকার। আমি এত টাকা কোথায় পাব? আমি সমাজের বিত্তবান, দয়ালু মানুষদের কাছে আমার ছেলের চোখের আলোর জন্য হাত পাতছি। আপনারা আমার বাচ্চাটাকে বাঁচান।”
ঢাকার চিকিৎসক ডাঃ ফারহাদ হোসেন জানিয়েছেন, ইমদাদুলের চোখের মণি ও কর্নিয়া মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে কয়েকটি অপারেশন এবং দীর্ঘমেয়াদী ফলোআপ চিকিৎসার প্রয়োজন। চিকিৎসায় দেরি হলে তার বাম চোখটি চিরতরে অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
৭২ নং পূর্ব কৈখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহিনুর রহমান বলেন, “ইমদাদুল আমাদের স্কুলের একজন মেধাবী ও শান্তশিষ্ট ছাত্র। তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই দুর্বল। এই দুর্ঘটনায় আমরা সবাই মর্মাহত। আমরা স্কুলের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো চেষ্টা করছি, কিন্তু চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করা তাদের পরিবারের পক্ষে অসম্ভব। শিশুটির চিকিৎসার জন্য সকলের সহযোগিতা একান্তভাবে প্রয়োজন।”
কৈখালী গ্রামের স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন একতা যুব সংঘের প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, “আমরা বিষয়টি জানার পর স্থানীয়ভাবে চেষ্টা চালিয়ে কিছু অর্থ সংগ্রহ করে ইমদাদুলের পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছি। তবে অপারেশনের জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, আমাদের সংগ্রহ করা এই অর্থ তার তুলনায় খুবই সামান্য।”
একটি অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা আর অর্থের অভাব কেড়ে নিতে বসেছে শিশু ইমদাদুলের ভবিষ্যৎ ও তার রঙিন স্বপ্ন। এই নিষ্পাপ শিশুটির চোখের আলো ফিরিয়ে দিতে আপনার সামান্য সহযোগিতাই হতে পারে একমাত্র অবলম্বন।
কৈখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বলেন, “বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং হৃদয়বিদারক। রফিকুল ইসলামের পরিবারটি অসহায় একটি পরিবার। তাদের পক্ষে এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালানো একেবারেই অসম্ভব। আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি, তবে অপারেশনের জন্য আরও অনেক অর্থের প্রয়োজন। আমি সমাজের বিত্তবান এবং মানবিক মানুষদের কাছে শিশুটির সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।”
শিশুর পূর্ণ ঠিকানা:
শিশুর নাম: ইমদাদুল হক
পিতার নাম: মোঃ রফিকুল ইসলাম
গ্রাম: কৈখালী, উপজেলা: শ্যামনগর, জেলা: সাতক্ষীরা
আর্থিক সাহায্য ও বিস্তারিত: 01995-733894 (ইমদাদুলের মা)
