শ্যামনগর, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং প্রতারণার অভিযোগে মো. মিজানুর রহমান নামের এক ভণ্ডপীরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে শ্যামনগরের ধুমঘাট অন্তাখালী গ্রামে তার নিজ আস্তানা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার জামাতা ও সহযোগী মো. আবু নাইমকেও আটক করা হয়।
এর আগে, প্রতারণা ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ এনে শংকরকাঠি গ্রামের সিদ্দিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে শ্যামনগর থানায় মামলা (মামলা নং-২০) দায়ের করেন।
গ্রেপ্তারকৃত মিজানুর রহমান নিজেকে ‘আল্লাহ পাকের কুতুব ও ওলি’ দাবি করে দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন। তিনি ‘অন্তঃচক্ষু’ খুলে দেওয়ার নাম করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে আর্থিক সুবিধা নিতেন। তার বিরুদ্ধে ভক্তদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
বাদী সিদ্দিকুল ইসলামের অভিযোগ, মিজানুর রহমানের নির্দেশনায় তার জামাতা আবু নাইম “শরীয়তের মানদণ্ডে ওলিগণের হালত” নামে একটি বই প্রকাশ করেন, যেখানে মহান আল্লাহ এবং রাসুল (সা.) সম্পর্কে অবমাননাকর বক্তব্য রয়েছে। ২০১৬ সালে প্রকাশিত এই বইয়ে দাবি করা হয়, মানুষের ইচ্ছায় আল্লাহ নিজের হুকুম পরিবর্তন করেন এবং বান্দারা সরাসরি আল্লাহর সঙ্গে কথা বলতে পারে।
এছাড়া, বাদী আরও অভিযোগ করেন, মিজান তার কাছ থেকে তিন লাখ টাকা ধার নিয়েছিলেন। পরে টাকা ফেরত চাইলে তিনি ‘মাওলা দিচ্ছে না’ বলে প্রতারণা করেন এবং বাদীকে তাড়িয়ে দেন।
গত শুক্রবার মিজানের বিরুদ্ধে জনরোষ সৃষ্টি হলে কয়েকশ মানুষ তার আস্তানার দিকে মিছিল নিয়ে এগিয়ে যায়। তবে পুলিশের বাধার কারণে তখন বড় ধরনের সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হয়। শ্যামনগর উপজেলা ওলামা পরিষদের নেতারা প্রশাসনকে তিন দিনের মধ্যে মিজানকে আইনের আওতায় আনার আল্টিমেটাম দেন।
সোমবার দুপুরে শ্যামনগর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে মিজানের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তোলেন কয়েকজন ভুক্তভোগী। চাঁদপুরের ইমরান হোসেন, শরীয়তপুরের জাফর আহমেদ এবং ঢাকার আব্দুল হালিম জানান, মিজান তাদের ‘আল্লাহর ওলি’ বানিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দীর্ঘ সাত বছর তার আস্তানায় থাকতে বাধ্য করেন। এ সময় তিনি অন্তঃচক্ষু খুলে দেওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর দিদার লাভ করানোর মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আদায় করেন।
এছাড়া, মিজান নিজেকে ‘মহান অলী’ দাবি করে বলতেন, তিনি নিয়মিত আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেন। এমনকি নিজের ছেলে ইউসুফকে রাসুলের জামাতা হিসেবে পরিচয় দিতেন এবং নানা আজগুবি তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতেন।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হুমায়ুন কবীর মোল্যা জানান, সিদ্দিকুল ইসলামের দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে মিজানুর রহমান ও তার জামাতা আবু নাইমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মিজানের গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে শ্যামনগর জুড়ে আনন্দ মিছিল বের হয়। এতে তার আস্তানার পার্শ্ববর্তী এলাকার সাধারণ মানুষ, আলেম-ওলামা ও স্থানীয় বাসিন্দারা অংশ নেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, মিজানুর রহমানের প্রতারণার বিষয়ে আরও তদন্ত চলছে এবং তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।