ডেস্ক রিপোর্ট: সাতক্ষীরার তালা থানার ডাকাতি, বিস্ফোরক ও অস্ত্র সহ বিভিন্ন মামলার আসামী তালার জেয়ালা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য রিয়াজুল ইসলামকে গ্রেফতার করে তালা থানা পুলিশ।
এঘটনার খবর পেয়ে রোববার রাত ৮টা থেকে গভীর রাত (রাত সাড়ে ১২টা) পর্যন্ত থানা ঘেরাও করে তাকে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করে তালা উপজেলা বিএনপি, যুবদলের কতিপয় নেতা-কর্মীরা। দীর্ঘক্ষণ থানা অবরুদ্ধ থাকায় পুলিশের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ নিরাপত্তার স্বার্থে থানার নিরাপত্তা গেটগুলো বন্ধ করে দেয়। হাজতে আটক থাকাকালে রিয়াজুল ইসলাম যুবদল নেতা ফারুক হোসেন ও তালা থানা ছাত্রদল সভাপতি হাফিজুর রহমান হাফিজকে হুমকি প্রদান করতে থাকে। সেসময় থানা পুলিশসহ এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষদের মাঝে উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গ্রেফতার হওয়া রিয়াজুল ইসলাম উপজেলার জেয়ালা নলতা গ্রামের মৃত বাসতুল্য মোড়লের ছেলে এবং তালা সদর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিষ্কার নেতা।
জানা গেছে, রিয়াজুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরেই চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়ে। এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা ও খুলনার বিভিন্ন আদালতে চলমান রয়েছে। মামলায় একাধিকবার পুলিশ ও র্যাবের হাতে সে আটক হয়ে জেল হাজতবাস করেছে। রিয়াজুল ইসলাম ২০১৩ সালের দিকে তালা সদর ইউনিয়নের জেয়ালা ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন এবং এই সময়ে নিজ গ্রামে ডাকাতি করার অভিযোগে তিনি গ্রেফতার হন।
উপজেলার জেয়ালা গ্রামের একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিনে সাতক্ষীরার জেল ভেঙ্গে পালিয়ে এলাকায় ফিরে তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে রাতেই স্বদেশ ঘোষ, তুষার কান্তি ঘোষ, পঞ্চানন ঘোষের দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করে রিয়াজুল ইসলাম। এসময় সন্ত্রাসীরা সংখ্যালঘুদের দোকান থেকে শত শত বস্তা গো-খাদ্য, মাছের ফিড, ওষুধ, কেরোসিন, ব্যারেল ব্যারেল ডিজেল ও তেল লুটপাট করে। এরপর থেকে বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের লুটপাটের ভয় দেখিয়ে এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা চাঁদা আদায় করছিল।
নানাবিধ অভিযোগের ভিত্তিতে রোববার (০৯ মার্চ) সন্ধ্যা ৭ টার দিকে তালার শেখের হাট বাজার থেকে রিয়াজুল মোড়লকে পুলিশ গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর রাত ৯ টার দিকে তালা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে সৈয়দ আজম, নাজমুল ইসলাম খান ও মোড়ল আব্দুর রহিম ওরফে সার্জেন্ট রহিম সহ ২ শতাধিক লোক থানা ঘেরাও করে রিয়াজুল ইসলামকে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টায় পুলিশ, বিএনপির বিপক্ষ গ্রæপের নেতা-কর্মী ও জামায়াতে ইসলামির বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য সহ স্লোগান দিতে থাকে। এসময় থানা এলাকায় থমথমে ভাব বিরাজ করে এবং পুলিশসহ সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা ও তালা-কলারোয়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিব’র নির্দেশনামতে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (তালা সার্কেল) হাসানুর রহমান ও বিএনপি নেতা এম. মফিদুল হক লিটু পরিস্থিতি শান্ত করেন।
এবিষয়ে তালা থানার ওসি শেখ শাহিনুর রহমান বলেন, রিয়াজুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ থাকায় পুলিশের একটি টিম তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। তাকে ছাড়াতে যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে রাত ৯ টার দিকে দুই শতাধিক দুষ্কৃতকারী থানার চারিদিকে ঘিরে রেখে থানা ও পুলিশ প্রশাসনকে অবরুদ্ধ করে। আইনের সকল নিয়ম কানুন ভঙ্গ করে থানায় জোরপূর্বক ঢুকে আসামীর ভিডিও সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করি এবং আসামি রিয়াজুল কে সার্কেল স্যারের উপস্থিতিতে রাতেই সাতক্ষীরা ডিবি কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে, ডাকাত সর্দার ও বহু অপকর্মের হোতা রিয়াজুল ইসলামকে থানা থেকে বিএনপি পরিচয়ে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করার ঘটনায় বিএনপির সাধারণ নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।