নিজস্ব প্রতিবেদক: তালার ইসলামকাটি ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে ইউনিয়ন বিএনপি সহ অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে দীর্ঘদিন আওয়ামীলীগ’র কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত থাকা ব্যক্তিকে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক করায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে দলের দুঃসময়ে হামলা, মামলা, নির্যাতনের শিকার হওয়া নেতা-কর্মীরা। তাঁরা অবিলম্বে আনিছুজ্জামান আনিছকে দল থেকে বহিস্কারের দাবী জানিয়েছেন। এরআগে, বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের স্থানীয় ও উপজেলার শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের উপর জুলুম নির্যাতন চালানো প্রভাষক শেখ আনিছুজ্জামান আনিছকে দলের কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত না রাখার জন্য ইসলামকাটি ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, কৃষকদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল সহ সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন নেতাদের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু, এই আবেদনকে তোয়াক্কা না করে আনিছুজ্জামান আনিছকে ৫ আগস্ট পরবর্তীতে ইসলামকাটি ইউনিয়ন বিএনপির সার্স কমিটির সদস্য এবং সম্প্রতি তাকে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক মনোনিত করেছেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, তালা উপজেলার ৭নং ইসলামকাটি ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি থাকাকালে ইসলামকাটি গ্রামের আবু বক্কার সিদ্দিক’র ছেলে প্রভাষক আনিছুজ্জামান আনিছ পারিবারিক ও শারীরিক সমস্যা উল্লেখ করে যুবদলের ইউনিয়ন সভাপতি পদ সহ প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। যা’ সাতক্ষীরার একটি পত্রিকায় ২৬ জানুয়ারী ২০১৯ তারিখে প্রেস বিজ্ঞপ্তি হিসেবে প্রকাশিত হয়। একই তারিখের ওই পত্রিকায় ইসলামকাটি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারন সম্পাদক প্রকাশ চন্দ্র গুহ’র পদত্যাগ পত্র অনুরুপ প্রেস বিজ্ঞপ্তি হিসেবে ছাপা হয়।
ইসলামকাটি ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নিবেদিতপ্রাণ একাধিক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দলের দুঃসময়ে দলকে ফেলে নিজ স্বার্থে দলীয় সকল পদ থেকে পদত্যাগ করার পর আনিছুজ্জামান আনিছ তালা উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে এবং আওয়ামী লীগের বিতর্কীত সংসদ নির্বাচন সহ স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে প্রচারনা চালানো সহ আওয়ামী দলীয় সকল কর্মসূচীতে অংশ নিতে থাকে। পরবর্তীতে ২৪ সালের ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগের পতন এবং শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে সুযোগ সন্ধ্যানী আনিছুজ্জামান ডিগবাজী দিয়ে আবারও বিএনপি সাজতে থাকে। একপর্যায়ে ইসলামকাটি ইউনিয়ন বিএনপি সার্স কমিটি গঠন করলে প্রভাষক আনিছুজ্জামান আনিছ কৌশলে এবং দায়িত্বশীল নেতাদের ম্যানেজ করে সার্স কমিটির ৪নং সদস্য হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। এবিষয়টি জানাজানি হলে ইউনিয়ন বিএনপি সহ অঙ্গ সংগঠনের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং তাকে সার্স কমিটি থেকে বহিস্কার করার জন্য সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) নির্বাচনী এলাকার টিম লিডার বরাবর আবেদন করেন। ওই আবেদনে ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক ও বর্তমান সভাপতি গাজী সুলতান আহমেদ, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল আলম, বিএনপি বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মহিদুজ্জামান (মধু), ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক শেখ আব্দুল মোমিন, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মো. মনিরুজ্জামান, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি মো. মফিজুল ইসলাম, সাধারন সম্পাদক খান রিপন হোসেন, ইউনিয়ন শ্রমিকদলের আহবায়কআক্তার হোসেন, ইউনিয়ন জাসাস সভাপতি আব্দুল আলীম ও জিয়া পরিষদের সভাপতি আজগর আলী সহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ১৭জন দায়িত্বশীর সিনিয়র নেতা স্বাক্ষর করেন। এছাড়া সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহবায়ক ও সদস্য সচিব বরাবর ইউনিয়ন যুবদল আহবায়ক আব্দুল মোমিন সহ বিএনপির ৮ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। কিন্তু প্রভাষক আনিছুজ্জামানের বিরুদ্ধে দায়ের করা দু’টি আবেদন এবং সেই সাথে সংযুক্ত করা সকল তথ্য-উপাত্ত উপেক্ষা করে তাকে ইসলামকাটি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক করায় ক্ষোভে ফুঁসছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নিবেদতিপ্রাণ নেতা-কর্মীরা।
তবে, এই সকল অভিযোগ অস্বীকার করে ইসলামকাটি ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান সাধারন সম্পাদক প্রভাষক আনিছুজ্জামান আনিছ বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আসছে সেগুলো সম্পূর্ন মিথ্যা এবং বানোয়াট।
এব্যপারে জানতে চাইলে ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান সভাপতি গাজী সুলতান আহম্মেদ বলেন, সার্স কমিটিতে আনিছুজ্জামানের নাম আসার পর আমি সহ দলের নেতারা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলাম। কিন্তু সিনিয়র নেতারা নিষেধ করায় এবং তার পদত্যাগপত্র খুজে না পাওয়ায় এবিষয়ে আর কথা বলিনি।
এব্যপারে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আবু হাসান হাদী জানান, আনিছুজ্জামান আনিছ এর পদত্যাগ পত্র গৃহিত হয়েছিল কি-না সেবিষয়ে ডকুমেন্ট পাওয়া যায়নি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পাওয়া গেলেও সেটাতে সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিলনা।
তবে, ইসলামকাটি ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা বলেন, দল থেকে পদত্যাগ করা সহ আওয়ামীলেিগর কর্মসূচীতে অংশগ্রহন করার সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত দিয়ে আনিছুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হলেও অজ্ঞাত কারনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যেকারনে প্রভাষক আনিছুজ্জামান আনিছ কৌশলে দলে ঢুকে সেক্রেটারী হয়েছেন। এই সকল নেতা-কর্মীরা অবিলম্বে সুযোগ সন্ধ্যানী আনিছুজ্জামান আনিছকে দল থেকে বহিস্কারের দাবী জানিয়েছেন। অন্যথায় তাঁর দ্বারা দল ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে তাদের অভিমত।
