সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাটকেলঘাটায় এবার কুলের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ১৬৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে বল সুন্দরী, ভারত সুন্দরী, থাই আপেল, বাউ কুল, আপেল কুল, তাইওয়ান কুল, নারিকেলি ও ঢাকা নাইনটিসহ বিভিন্ন জাতের কুল। এতে উপজেলায় এবার ২ হাজার ৩ শত ১০ মেট্রিক টন কুল উৎপাদনের প্রত্যাশা করছে কৃষি বিভাগ।
সূত্র মতে, সাতক্ষীরার কুল স্বাদে, গুণে ও মানে অনন্য হওয়ায় এর চাহিদা রয়েছে সারা দেশেই। একই সঙ্গে কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় সাতক্ষীরার চাষিরাও ঝুঁকছেন বাণিজ্যিক কুল চাষে। ফলে গত চার বছরের ব্যবধানে উপজেলায় কুলের আবাদ চারগুন বেড়েছে। এতে একদিকে যেমন সমৃদ্ধ হচ্ছে সাতক্ষীরার অর্থনীতি, অন্যদিকে কুল চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেকে। সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, সাতক্ষীরার মাটি কুল চাষের জন্য বেশ উপযোগী। মূলত ২০০০ সালের পর থেকে এ জেলায় বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষ শুরু হয় এবং ক্রমান্বয়ে তা বাড়তে থাকে। ২০১৯ সালে যেখানে জেলার ৫৫০ হেক্টর জমিতে কুলের আবাদ হয়েছিল, সেখানে চলতি মৌসুমে তা অনেকগুন বেড়েছে। সাতক্ষীরার তালা ও পাটকেলঘাটার কাশিপুর এলাকা সহ বিভিন্ন এলাকায় গেলে দেখা যায় মাঠের পর মাঠ সারি সারি কুলের বাগান। মৎস্য ঘেরের আইলে ও ব্যাপকহারে কুল চাষ হয়েছে। এসব বাগানের গাছগুলোতে যেন উপচে পড়ছে নানা জাতের কুল বরই। কুলের ভারে নুয়ে পড়ছে ডাল। এদিকে বাজারেও উঠেছে নানা জাতের কুল।
সাতক্ষীরা তালা উপজেলার পাটকেলঘাটার মেহেদি হাসান পলাশ পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও উন্নয়ন প্রচেষ্টার কৃষি ইউনিটের আওতায় কৃষি খাতভুক্ত ফল বাগান স্থাপন প্রদর্শনীর মাধ্যমে ৭ বিঘা জমিতে আগাম জাতের টক মিষ্টি বরই, আপেল কুল ও থাই আপেল জাতের বরই চাষ করেছেন। এতে তার প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ বছর ৫ লাখ টাকার বেশি বিক্রি হবে।
জুজখোলা গ্রামের কুল চাষি মুকুল হোসেন জানান, এ বছর ৫ বিঘা জমিতে কুল আবাদ করেছেন তিনি। এতে তার প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এরই মধ্যে কুল বাজারজাত করতে শুরু করেছেন তিনি। ৩ লাখ টাকার বেচাকেনার প্রত্যাশা তার। তিনি আরও জানান, বর্তমানে নারকেলি কুল ১৩০ টাকা দরে ঢাকার ব্যবসায়ীরা নিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া আপেল কুল ও বাউ কুলসহ অন্যান্য কুল ৭০- ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
পাটকেলঘাটার আরেক কুলচাষি মসলেম উদ্দীন, শেখ জামাল উদ্দীন ইউসুফ সহ কয়েকজন কুল চাষি জানান, প্রতি বিঘা জমিতে কুল চাষ করতে খরচ হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। বিঘাপ্রতি ৮০ থেকে ১ লাখ টাকার ফলন পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন তারা।
পাটকেলঘাটা থানার কাশিপুর গ্রামের কুল চাষি শেরখ মিজানুর রহমান,ফজর আলী,আমিনুর রহমান জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে কুল চাষ করছেন তারা। তারা জানান বাগানে থাই আপেল, বল সুন্দরী, বিলাতি, কাশ্মীর আপেল, দেশি আপেল, নারকেলি ও টক বোম্বাইসহ বিভিন্ন জাতের কুলচাষ করেছেন । এসব গাছে গত কয়েক বছর ধরে কুল উৎপাদন হচ্ছে। এবার দামও পাচ্ছেন তারা।
পাটকেলঘাটার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বড় বাজারে বিলাতি কুল ১০০ থেকে ১২০ টাকা এবং আপেল কুল ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আবুল কালাম নামে এক ক্রেতা বলেন, পাটকেলঘাটার কুল খুবই নাম করা। তবে বেশি দামের আশায় অনেক ব্যবসায়ী কুল ভালোভাবে পাকার আগেই বিক্রি করছেন। বিশেষ করে আপেল কুলগুলো পাকা না ফুলো তা সাধারণ ক্রেতারা বুঝতে পারেন না।
এতে অনেক ক্রেতাই উৎসাহ হারান। তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা বেগম বলেন, আমের মতোই তালার কুলের নাম দেশজুড়ে। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া কুল চাষের জন্য অনুকূল হওয়ায় এর চাষাবাদ বাড়ছে। চলতি মৌসুমেও তালা পাটকেলঘাটায় কুলের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে চাষিরা বেশ লাভবান হবেন।